রেফ্রিজারেশন পদ্ধতিগুলোর বর্ণনা

এসএসসি(ভোকেশনাল) - রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

১.২.৩ রেফ্রিজারেশন পদ্ধতিগুলোর বর্ণনা

(১) ভ্যাপার কম্প্রেশন রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি (Vapour Compression Refrigeration System) 

ভ্যাপার কম্প্রেশন পদ্ধতিতে একটি রাসায়নিক পদার্থকে পর্যায়ক্রমে একবার তরল থেকে বাষ্পে রূপান্তরিত করা হয় যাকে আমরা ইভাপোরেশন বা বাষ্পায়ন বলি এবং এ প্রক্রিয়ার ফলে তাপ শোষণ করে শীতল পরিবেশ তৈরি করা হয়। পুনরায় রাসায়নিক পদার্থের বাষ্পকে তরলে রূপান্তরিত করা হয় যাকে আমরা কন্ডেনসেশন (Condensation) বা তরলীকরণ বলি এবং এ প্রক্রিয়াচাপ মুক্ত করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এ আবর্তনকে চারটি পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়-

১. সংকোচন প্রক্রিয়া (Compression Process) 

২. ঘনীভবন প্রক্রিয়া (Condensation Process ) 

৩. সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া (Expension Process ) 

৪. বাষ্পায়ন প্রক্রিয়া (Evaporation Process)

 

উপরে উল্লেখিত চারটি প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য চারটি মৌলিক অংশের প্রয়োজন হয়। অংশগুলো হল- 

১. কম্প্রেসর (Compressor) : বাষ্প সংকোচন করে এবং চক্রে হিমায়ক বা রেফ্রিজারেন্ট সঞ্চালন করে। 

২. কন্ডেনসার (Condenser) : বাষ্পীয় হিমায়ক তরলে পরিণত করে। 

৩. এক্সপানশন ডিভাইস (Expansion Device / Capillary Tube) : তরল হিমায়কের চাপ কমায় এবং প্রবাহ হার নিয়ন্ত্রণ করে। 

৪. ইভাপোরেটর বা কুলিং কয়েল (Evaporator) : তরল হিমায়ককে বাষ্পে রূপান্তর করে।

ভ্যাপার কম্প্রেসন রেফ্রিজারেশন চক্রে উপরে উল্লেখিত চারটি প্রধান অংশ ছাড়াও সহায়ক অংশ হিসেবে ফিল্টার ড্রায়ার, রিসিভার, এ্যাকুমুলেটর প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়।

কাজের প্রণালী 

১. কম্প্রেসন (Compression) 

ইভাপোরেটর হতে নিম্নচাপ ও তাপমাত্রায় বাষ্পীয় হিমায়ক বাষ্পে রূপান্তর করে এবং কম্প্রেসরে সংকুচিত হয়ে উচ্চচাপ ও তাপমাত্রায় ডিসচার্জ লাইন দিয়ে কন্ডেনসারে চলে যায় । 

২. কন্ডেনসেশন (Condensation) 

কম্প্রেসর থেকে আসা উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রায় বাষ্পীয় হিমায়ক তাপ বর্জন করে উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রায় তরলে পরিণত হয়। ছোট ছোট হিমায়ন যন্ত্রে কন্ডেনসার থেকে তাপ অপসারণের জন্য ফ্যান ব্যবহার করা হয় এবং বড় হিমায়ন যন্ত্রে তাপ অপসারণের জন্য পানি বা ব্রাইন ওয়াটার (লবণ মিশ্রিত পানি) এর মাধ্যমে কন্ডেনসার ঠান্ডা করা হয়।

৩. এক্সপানশন (Expansion ) 

ইভাপোরেটরে যাতে তরল হিমায়ক সহজে বাম্পে পরিণত হতে পারে সেজন্য এক্সপানশন ডিভাইস রেফ্রিজারেন্টের চাপ কমিয়ে দেয় এবং কোন এক্সপানশন ডিভাইস ইভাপোরেটরের চাহিদামত রেফ্রিজারেন্ট বা হিমায়ক নিয়ন্ত্রণ করে ইভাপোরেটরের পাঠায়।

৪. ইভাপোরেশন (Evaporation) 

এক্সপানশন ডিভাইস থেকে নিম্নচাপ ও তাপমাত্রার রেফ্রিজারেন্ট ছোট ছোট কণা আকারে ইভাপোরেটর কয়েলে প্রবেশ করে সম্প্রসারিত হয় এবং হিমায়ক বা রেফ্রিজারেন্ট সুপ্ততাপ বা ল্যাটিন্ট হিট গ্রহণ করে নিম্নচাপ ও তাপমাত্রায় বাষ্পে পরিণত হয়। এভাবে চক্র সম্পন্ন হয় এবং চক্রের পুনরাবৃত্তির ফলে ইভাপোরেটরে নিম্ন তাপমাত্রার সৃষ্টি হয় ।

ভ্যাপার কম্প্রেশন রেফ্রিজারেশন সিস্টেমের ব্যবহার ক্ষেত্র- 

(ক) ডোমেস্টিক রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার, বিভিন্ন ধরনের এর কন্ডিশনার; 

(খ) ওয়াটার কুলার, ডি-হিউমিডিফায়ার, ইনকিউবেটর; 

(গ) ওয়াক-ইন-কুলার, রিচ-ইন-কুলার, ফিশ ও মিট প্রিজার্ভার; 

(ঘ) ব্লাড ব্যাংক, ট্রান্সপোর্ট রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনার, আইসক্রিম ফ্যাক্টরিং 

(ঙ) ডিসপ্লে কেস, মিল্ক কুলার, বেভারেজ কুলার, আইস প্লান্ট, ডেইরি ফার্ম, আইস মেকার।

 

(২) ভ্যাপার অ্যাবজর্পশন রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি 

অ্যাবজপর্শন রেফ্রিজারেশন সিস্টেম একটি তাপ পরিচালিত ইউনিট যাতে রেফ্রিজারেন্ট পরিবর্তিত ভাবে শোষক পদার্থ কর্তৃক শোষিত মুক্ত হয়। জেনারেটরের মধ্যে অ্যামোনিয়া (NH3) ও পানি (H2O) তরল অবস্থায় থাকে। জেনারেটরে কেরোসিনের বাতি বা গ্যাস বা ইলেকট্রিক হিটারের সাহায্যে তাপ (Heat) প্রয়োগ করা হয়। অ্যামোনিয়ার বাষ্পীভবন তাপমাত্রা পানির বাষ্পীভবন তাপমাত্রা অপেক্ষা অনেক কম হওয়ায় অ্যামোনিয়া অনেক আগেই বাষ্পে পরিণত হয় এবং উপরের নলে ওঠে যায়। উপরে যাওয়ার সময় অ্যামোনিয়া বাম্পের সাথে কিছু পানির বাষ্প নিয়ে যায় (অ্যামোনিয়া পানিতে দ্রবণীয় বলে)। জেনারেটর হতে অ্যামোনিয়া ও পানি উভয়ই জেনারেটরের উপরে অবস্থিত সেপারেটরে পৌঁছায়। এই পাত্রে পানি কিছুটা শীতল হয়, ফলে এটি বাষ্প হতে তরলে পরিণত হয়। কিন্তু অ্যামোনিয়া উচ্চ চাপে বাষ্পীয় অবস্থায় থেকে যায়। সেপারেটরের উপরের নির্গম পথে লিকুইড সিল ব্যবহার করা হলে পানি বা অ্যামোনিয়ার পানির তরল মিশ্রন উপরে কন্ডেনসারের দিকে যেতে পারে না। উষ্ণ পানি সেপারেটরের নিচের দিকের নল দিয়ে অ্যাবজর্বারে চলে যায়। অন্যদিকে বাষ্পীয় অ্যামোনিয়া তাপ হারিয়ে ভরলে পরিণত হয়। এই তরল অ্যামোনিয়া কন্ডেনসারের সরু নির্গম নল দিয়ে নিম্নচাপে ইভাপোরেটরে প্রবেশ করে। অপরপক্ষে, অ্যাবজরবার হতে আগত অপেক্ষাকৃত হালকা হাইড্রোজেন (H2) গ্যাস ইভাপোরেটরে পৌঁছায়। এই প্রায় বিপরীতমুখী প্রবাহের ফলে অ্যামোনিয়ার চাপ কমে যায়। এতে তরল হিমায়ক দ্রুত বাস্পায়নের সময় প্রচুর সুপ্তভাগ গ্রহণ করে। ফলে ইভাপোরেটর করেন শীতল/ ঠাণ্ডা হয়। 

জেনারেটর তাপ প্ররোগের জন্য ইলেকট্রিক হিটার ব্যবহার করা হলে এর সাথে সিরিজে একটি থার্মোস্ট্যাট (Thermostat/Th.) ব্যবহৃত হয়, যাতে স্বরেক্রিয়ভাবে (Automatic) এটি অন-অফ (on-off) করা যায়। প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হলে চাপ ও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি রেগুলেটর ব্যবহৃত হয়। এই রেগুলেটরের সাথে কুলি‍ চেম্বারের সম্পর্ক থাকে।

বাস্তবক্ষেত্রে এই হিমায়নে আবর্তন চক্রের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একাধিক হিট এক্সচেঞ্জার (Heat Exchanger), এনালাইজার ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। হিট এক্সচেয়ারগুলো তাপ বিনিময়ের মাধ্যমে ইউনিটের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে।

ভ্যাপার অ্যাবজর্গশন রেফ্রিজারেশন সিস্টেমের ব্যবহার ক্ষেত্র 

সেন্ট্রাল বা কেন্দ্রীয় এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমে, আবাসিক রেফ্রিজারেশন সিস্টেম / রেফ্রিজারেটর, শিল্প ও হাসপাতাল ইত্যাদি।

(৩) ইভাপোরেটিভ রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি (Evaporative Refrigeration System)

ইভাপোরেটিভ কুলিং সিস্টেমে ওরেটেড অ্যাসপেন প্যাড (Watted Aspen Pads) ব্যবহৃত হয়। স্লোয়ারের মাধ্যমে বাইরে থেকে পরম বাতাস প্যাডের উপর দিয়ে প্রবেশ করিয়ে বাতাসের তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস হতে ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এ আনয়ন করা হয় (8°C to 17°C or 15°F to 30°F)। এক্ষেত্রে বেশি গতি সম্পন্ন গ্রোয়ার ব্যবহার করা হয়। আর্দ্রতা বৃদ্ধি করতেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ।

কৃত্রিম তুষার তৈরিকরণ (Artificial Snow Air and Water Mixture) প্রণালীতে কোন শেলের মধ্যে দিয়ে এক প্রাপ্ত হতে ১৫০ পি.এস.আই ( 150 PSI ) সংকুচিত বাতাস প্রবেশ করানো হয়। অপর প্রান্ত বা মাঝ বরাবর ১০০ পি.এস.আই (100 PSI) ওয়াটার লাইন সংযুক্ত থাকে। লেলের এক প্রাপ্ত খোলা বা উন্মুক্ত থাকে, যে দিক দিয়ে কৃত্রিম তুষার/বরফ বের হয়। অপর দু'প্রান্তে এরার নজেল ও ওয়াটার লাইন প্রবেশ করানো থাকে। নজেলের মাধ্যমে সংকুচিত বাতাস (কম্প্রেসড এয়ার) ১৫০ পি.এস.আই চাপে প্রবেশ করানো হয় । শেলের নীচের অংশে নিয়ে ১০০ পি.এস.আই চাপের ওয়াটার/পানি প্রবেশ করে ফলে খোলা/উন্মুক্ত প্রাপ্ত দিয়ে আর্টিফিসিয়াল শো বা কৃত্রিম বরফ তৈরি হয়।

 

মরুভূমিতে পানি ঠাণ্ডা করণের জন্য ডেজার্ট ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত লেদার বা চামড়ার তৈরি হয়। ভেতরে সংরক্ষিত পানি (H2O) বাম্পায়ণের (Evaporation) ফলে শীতল হয়।

                      চিত্র ১.৯: ইভাপোরেটিভ রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি (ডেজার্ট ব্যাগ)

 

ইভাপোরেটিভ রেফ্রিজারেশন সিস্টেমের ব্যবহার ক্ষেত্র 

(ক) আগের দিনে মরু ভূমিতে ঠান্ডা পানি বা বরফ তৈরিতে ব্যবহার করা হতো: 

(খ) ডিজার্ট কুলার বা ইভাপোরেটিভ কুলারে ব্যবহার করা হয়; 

(গ) কৃত্রিম ভূষার তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়।

(৪) ড্রাই আইস রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি (Dry Ice Refrigeration System) 

ড্রাই আইস (Dry Ice) বলতে আমরা সাধারণত কার্বন ডাই অক্সাইডের কঠিন রূপকে (Solid CO2) বুঝি । অর্থাৎ, শুল্ক কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কঠিন রূপকেই ড্রাই আইস বলে। অনেক কম তাপমাত্রায় এবং কম চাপে (-56.4 °C তাপমাত্রা এবং 5.13 atm চাপে) গ্যাসীয় কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে রেখে দিলে সেটি তরলে রূপান্তরিত না হয়ে সরাসরি কঠিন পদার্থের আকার ধারণ করে। যে সিস্টেমে ড্রাই আইস এর মাধ্যমে বা কঠিন কার্বন ডাই অক্সাইড এর মাধ্যমে শীতল বা ঠান্ডা করা হয় তাকেই ড্রাই আইস রেফ্রিজারেশন সিস্টেম বলে। এই সিস্টেমে তাপমাত্রা সাধারণত - 78°C এ আনয়ন করা যায়। বিদেশ থেকে মূল্যবান ঔষধ, ভ্যাকসিন, মৃতদেহ সংরক্ষণ করতে এটি ব্যবহৃত হয়।

ড্রাই আইস রেফ্রিজারেশন সিস্টেমের ব্যবহার ক্ষেত্র 

(ক) ড্রাই আইস রেফ্রিজারেশন ব্যবহার হয় যেখানে বিদ্যুৎ নেই 

(খ) পচনশীল খাদ্যদ্রব্য পরিবহনে 

(গ) জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, ভ্যাকসিন ইত্যাদি পরিবহন ও সংরক্ষণে 

(ঘ) চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক জমাট বাঁধানোর কাজে, 

(ঙ) পরিবহন কন্টেইনার ঠাণ্ডা করার কাজে।

 

(৫) আইস রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি (Ice Refrigeration System ) 

এই পদ্ধতিতে প্রকোষ্ঠের মধ্যে সরাসরি বরফের সাহায্যে ঠান্ডা করা হয়ে থাকে। ইন্সুলেটেড ক্যাবিনেটের উপর ট্রেতে বরফ বা আইস (lce) বসানো থাকে ও নিচের র‍্যাকে/ কম্পার্টমেন্টে খাদ্য সামগ্ৰী তাক (Shelf) এ রাখা হয়।

ঠাণ্ডা বাতাস (Cold Air) আইস কম্পার্টমেন্ট হতে নিচের দিকে প্রবাহিত হয় এবং নিচে রাখা খাদ্য সামগ্রীকে ঠান্ডা করে। বাতাস গরম হলে ক্যাবিনেট হতে উপরের দিকে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় ঠান্ডা অবস্থায় সমগ্র স্থান (Space) কে ঠান্ডা বা শীতল করে। এভাবে 4.4°C হতে 5.5°C এর মধ্যে রাখা হয়। যখন তাপমাত্রা 0°C এর প্রয়োজন হয় তখন বরফের সাথে লবন মেশালে অনেক নিচে তাপমাত্রা নামানো সম্ভব। আইস রেফ্রিজারেশন পদ্ধতিতে ক্যাবিনেটের উপরে সংরক্ষিত বরফ শেষ হলে পরে বাইরে থেকে বরফ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ম্যানুয়ালি বরফ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয় ।

(৬) থার্মো-ইলেকট্রিক রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি (Thermo - Electric Refrigeration System) 

থার্মো-ইলেকট্রিক রেফ্রিজারেশন সিস্টেমে এক ধরনের কাপল কাজ করে। পিএন জাংশন (P-N Junction) এর মাধ্যমে ইলেকট্রনের আদান প্রদানের কোল্ড পয়েন্টে পরিণত হয়। উক্ত কোল্ড পয়েন্ট হতে ফ্যানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত স্থানে/ কন্ডিশন স্পেসে (Condition Space) সরবরাহ করা হয়। ডিসি ভোল্টেজ (D.C Voltage) সরবরাহ করে শীতলতা তৈরি করা হয়ে থাকে। P-N জংশন এক ধরনের সংকর ধাতুর যুগলের তৈরি, যাতে কিছু ইলেকট্রন ঘাটতি থাকায় এতে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।

কার্যপ্রণালী 

থার্মো-ইলেকট্রিক কুলারের পাওয়ার সাপ্লাই-এ ২২০ ভোল্ট এসিকে স্টেপডাউন ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে ২০ ভোল্ট এ.সি. এবং রেক্টিফায়ারের সাহায্যে ২০ ভোল্ট ডি.সি.তে রুপান্তর করা হয়। ২০ ভোল্টের ডাইরেক্ট কারেন্ট থার্মো-ইলেকট্রিক মডিউলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে রেফ্রিজারেটরের ভেতরের জাংশন ঠান্ডা এবং বাইরের জাংশন গরম হয়। থার্মো-ইলেকট্রিক কুলিং ইউনিট যখন রেফ্রিজারেশনে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে মডিউল (Module) বলে ।

থার্মো- ইলেকট্রিক রেফ্রিজারেশন সিস্টেমের ব্যবহার ক্ষেত্র 

(ক) বহনযোগ্য (Portable) রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত হয়। 

(খ) বিলাসসামগ্রী হিসেবে (Luxury Type) আংশিক রেফ্রিজারেটর ও ওয়াটার কুলারে । 

(গ) মহাশূন্যযান ও এয়ার ক্রাফটে বৈজ্ঞানিক সামগ্রী ঠান্ডা করার কাজে। 

(ঘ) কম্পিউটার ও ইলেকট্রিক সামগ্রী ঠান্ডা করার কাজে । 

(ঙ) যেখানে তাপমাত্রার পার্থক্য কম সেখানে রুম এয়ার কন্ডিশনিং -এর কাজে।

 

(৭) স্টিম জেট রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি (Steam Jet Refrigeration System ) 

স্টিম (Steam) শব্দের অর্থ পানির বাষ্প আর জেট (Jet) শব্দের অর্থ দ্রুত বেগে। এক্ষেত্রে পানির বাষ্পকে (Vapour) দ্রুত বেগে চিকন নালীর মধ্যে প্রবেশ করে শীতলতা আনয়ন করা হয়। ট্যাংকের উপরের অংশে স্টিম/ বাষ্প পানির উপর প্রয়োগ করায় পানির উপরের অংশে দ্রুত বাষ্পায়ন (Evaporation) ঘটে, আর নিচের অংশে চিল্ড ওয়াটার/ঠান্ডা পানি/শীতল পানিতে পরিণত হয় ।

উক্ত শীতল পানি/ চিল্ড ওয়াটার পাম্পের মাধ্যমে শীতল স্থানে (Cooled Area) প্রেরণ করা হয়। কোল্ড স্থান হতে বস্তু (Products) তাপ গ্রহণ করে পুনরায় বাষ্পীয় অবস্থায় ধারণ করে উক্ত পানি চিলারে নজেলের মাধ্যমে অর্পিত হয়। চিলারের পানি কমতি হলে মেকআপ ওয়াটার লাইনের মাধ্যমে পুনরায় পানি মেকআপ করা হয়।

স্টিম জেট রেফ্রিজারেশন সিস্টেমের ব্যবহার ক্ষেত্র

ইন্ডাস্ট্রিতে যেখানে বয়লার আছে এবং প্রচুর স্টিমের ব্যবহার হয় সেখানে এয়ারকন্ডিশনিং-এর জন্য স্টিম জেট রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

 

(৮) ভোরটেক্স টিউব রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি (Vortex Tube Refrigeration System ) 

ভোরটেক্স টিউবের (Vortex Tube) চিকন নালির মধ্যে দিয়ে বাতাস প্রবাহের ফলে ঘুরে ঘুরে যাওয়ার দরুন বাতাস (Air) অনেকটা শীতল আকার ধারণ করে। উক্ত শীতল বাতাস পরবর্তীতে চিকন লাইনের মাধ্যমে স্পেস (Space) বা স্থানে প্রেরণ করায় এর চতুপার্শ্বে শীতল হয়।

ভোরটেক্স টিউব প্রধানত নিচে বর্ণিত অংশগুলো নিয়ে গঠিত হয়- 

১। নজেল (Nozzle) 

২। ডায়াফ্রাম (Diaphragm) 

৩। ভালভ (Valve) 

৪ । গরম বাতাস নির্গমন প্রান্ত (Hot air side) 

৫। শীতল বাতাস নির্গমন প্রাস্ত (Cold air side)

ভোরটেক্স টিউবের কার্যপ্রণালি

ভোরটেক্স টিউবের নজেলগুলো এমনভাবে সাজানো থাকে যাকে সংকুচিত বাতাস জেনারেশন চেম্বারের পরিধি বরাবর ভীর্যকভাবে ইনজেক্ট করা যায়। এতে সাইক্লোনের মতো বাতাসের ঘূর্ণিপাক সৃষ্টি হয় । নজেলের আকৃতির কারণে বাতাসের চাপ কমে বেগ (প্রার শব্দের গতির সমান বেড়ে যায়। ফলে জেনারেশন চেম্বারে ভোরটেক্স প্রবাহ সৃষ্টি হয় এবং বাতাস কুন্ডলীর আকারে পাকিয়ে পাকিয়ে (Spiral like motion) পাইপের ভেতরের গা বেয়ে পরম প্রান্তের দিকে এগিয়ে যায়। আংশিক বন্ধ এই ভালতের বাধার কারণে বাতাস প্রবাহের চাপ যখন বাইরের চেয়ে কিছুটা বেড়ে যায় তখন পাইপের কেন্দ্র দিয়ে একটি বিপরীতমুখী এক্সিয়াল ফ্লো সৃষ্টি হয়। এই উল্টো স্রোত বেশি চাপ থেকে কম চাপের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় সম্মুখ স্রোত ও বিপরীত স্রোতের মধ্যে শক্তির স্থানান্তর বা বিনিময় ঘটে। ফলে ভোরটেক্স টিউবের কেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত বিপরীত স্রোত শীতল হয়ে, প্রবেশ তাপমাত্রার চেয়ে অনেক নিম্ন তাপমাত্রায় পরিণত হয় এবং টিউবের পাঁ বেয়ে ধাবমান সম্মুখ স্রোত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ঠান্ডা বাতাস ডায়াফ্রামের ছিদ্রপথ হয়ে শীতল প্রায় দিয়ে নির্গত হয় এবং গরম বাতাস ভালভের খোলা পথ দিয়ে বের হয়ে যায়। ভালভ খোলার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে, ঠান্ডা বাতাস প্রবাহের পরিমাণ ও তার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

ভোরটেক্স টিউৰ রেফ্রিজারেশন সিস্টেমের ব্যবহার ক্ষেত্র 

(ক) খনিতে কর্মরত শ্রমিকের শরীর ঠান্ডা করার জন্য পরিষের পোশাকে ভোরটেক্স টিউব ব্যবহৃত হয়। 

(খ) যেখানে তরল কুল্যান্ট ব্যবহার অনাকাঙ্খিত সে ক্ষেত্রে টুলবিট ঠান্ডা করা বা অনুরূপ কাজে ভোরটেক্স টিউব ব্যবহার করা হয় । 

(গ) প্যাস টারবাইনের রোটর ব্লেড ঠান্ডা করার কাজে ভোরটেক্স টিউব ব্যবহৃত হয়। 

(ঘ) সমান মাপের দুটি যন্ত্রাংশের একটি ঠান্ডা করে সামান্য সংকুচিত অবস্থায় অপরটির ভেতরে ফিট করার কাজে (Shrink fitting) ভোরটেক্স টিউব ব্যবহার করা হয়।

(ঙ) ল্যাবরেটরীতে কোন নমুনা (Sample) নির্দিষ্ট সময় শীতল রাখার কাজে ভোরটেক্স টিউব ব্যবহৃত হয়। 

(১) এক্সপেন্ডেবল রেফ্রিজারেন্ট রেফ্রিজারেশন পদ্ধতি (Expandable Refrigeration System) এই পদ্ধতিটি ট্রান্সপোর্ট রেফ্রিজারেশনে অধিক ব্যবহৃত হয়। তরল হিমায়ক চেম্বার / স্পেসের মধ্যে স্প্রে করানো হয়। লিকুইড নাইট্রোজেন (N2) সিলিন্ডারের মাধ্যমে কন্ডিশন স্পেসে শীতলতা বজায় রাখে। 

এক্সপেডেল রেফ্রিজারেন্ট রেফ্রিজারেশন সিস্টেমের ব্যবহার ক্ষেত্র- 

কাভার্ড ভ্যান বা ট্রাক রেফ্রিজারেশনে ব্যবহৃত হয় ।

 

 

Content added || updated By
Promotion